অতিথি : প্রখর রুদ্র
রবীন্দ্র ভাবনা ও আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন রবীন্দ্র গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর প্রখর রুদ্র। প্রখর রুদ্র দেশ বিদেশে বহু পরিচিত এক নাম। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ , ‘বাঙালির সংস্কৃতি’ , ও আমার দেশের মাটি’ ইত্যাদি।
সুমন যখন শিমুলতলীর বাসস্ট্যান্ডে নামলো তখন রাত দশটা বাজে গিয়েছে। প্রচন্ড শীতের রাতে চারিদিকে শুনশান নীরবতা। কোনো জনমানুষের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। সমস্ত দোকান-পাঠ বন্ধ। তাকে বহন করা বাস সুমনকে নামিয়ে দিয়েই মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো। এই গারো অন্ধকারে সুমন মোবাইলের টর্চ জ্বালাতে যাবে ঠিক সেই সময় হলো এক আশ্চর্য ঘটনা।
একটি হিমশীতল বাতাস হঠাৎ করেই সুমনের শরীর স্পর্শ করলো, যেন কারো শীতল হাত তার ঘাড় ছুঁয়ে গেলো। সে আঁতকে উঠে পেছনে তাকালো, কিন্তু সেখানে কেউ নেই। হালকা কুয়াশার আস্তরণে রাস্তার দুই পাশের গাছগুলোকে আরও রহস্যময় লাগছিল।
সুমন দ্রুত তার মোবাইলের টর্চ জ্বালালো। আলোয় ভেসে উঠলো স্ট্যান্ডের পাশে একটি কাঠের বেঞ্চ, আর তার সামনেই ছড়িয়ে থাকা কিছু কাগজপত্র এবং… রক্ত! টাটকা রক্ত! রক্তের দাগ রাস্তার দিকে এগিয়ে গেছে। তার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে গেলো।
সন্দেহজনক কিছু একটা যে ঘটেছে তা বুঝতে পেরে সুমন সতর্ক পায়ে এগিয়ে গেলো। রক্তের দাগ অনুসরণ করতে করতে সে একেবারে স্ট্যান্ডের পাশের বন্ধ দোকানের পেছনে গিয়ে উপস্থিত হলো। সেখানে একটি দেহ পড়ে আছে!
একজন মধ্যবয়সী লোক, গায়ে চাদর জড়ানো, কিন্তু তাতে লালচে দাগ। গলার কাছে গভীর ক্ষত থেকে রক্ত গড়িয়ে মাটিতে পড়েছে। সুমনের মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। ভয় পেলেও সে নিজেকে সামলে মোবাইল বের করে পুলিশে ফোন দিলো।
প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ এসে পৌঁছালো। স্থানীয় থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ আহমেদ এবং তার দল এলাকা ঘিরে ফেললো। ফরিদ পেশাদার গোয়েন্দার মতো চারপাশ দেখলেন এবং বললেন, “হত্যা হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। কিন্তু আশেপাশে কেউ কিছু শুনলো না?”
পুলিশ তদন্ত শুরু করলো, এবং ঠিক সেই সময় একজন অদ্ভুত চেহারার বৃদ্ধ এসে বললো, “এখানে সবকিছু অদ্ভুত। গত পাঁচ বছরে এই জায়গায় তিনটি খুন হয়েছে, আর প্রত্যেকবারই কেউ না কেউ এক অদ্ভুত ছায়ামূর্তি দেখেছে।”
সুমন অবাক হয়ে বললো, “ছায়ামূর্তি?”
বৃদ্ধ মাথা নেড়ে বললো, “হ্যাঁ, এক রহস্যময় আত্মা, যে নাকি প্রতিশোধ নিতে এসেছে!”
পুলিশের মধ্যে কেউ কেউ হাসলো, কিন্তু ফরিদ আহমেদ গম্ভীর ছিলেন। তিনি তার ডিটেকটিভ বন্ধু রফিক হাসানকে ডেকে পাঠালেন। রফিক খুব অভিজ্ঞ গোয়েন্দা, এবং ভূতুড়ে ব্যাপারে তার আগ্রহ বেশি।
রফিক জায়গাটি ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। তিনি খুনের জায়গার চারপাশে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন দেখতে পেলেন, যা সাধারণ মানুষের পায়ের ছাপের মতো নয়। তিনি বললেন, “এটা খুব অদ্ভুত। আমি মনে করি, হত্যাকারী এখানে একা ছিল না। হয়তো সে কাউকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল।”
রাত গভীর হতে থাকলো। তদন্ত চলতে থাকলো। এমন সময় হঠাৎ সবাই শুনতে পেলো একটি হালকা হাসির শব্দ, যা রাতের নীরবতা ভেঙে দিলো। শীতল বাতাস বইতে লাগলো, এবং সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।
“কে?” ফরিদ আহমেদ চিৎকার করলেন, কিন্তু কোনো উত্তর এল না।
এতক্ষণে সুমন বুঝতে পারলো, সে এমন এক রহস্যের মাঝে পড়ে গেছে, যা স্বাভাবিক নয়। রফিক হাসান তার চোখ সরু করে বললেন, “আমরা এখানে পুরো রাত থাকবো, কারণ এই হত্যার পিছনে কিছু অদ্ভুত রহস্য লুকিয়ে আছে।”
রাত বাড়ার সাথে সাথে আরও কিছু আশ্চর্য ঘটনা ঘটতে থাকলো। কোথাও কোনো প্রাণী না থাকলেও গাছের ডাল হঠাৎ করে নড়তে লাগলো, হালকা কুয়াশার মধ্যে অদ্ভুত এক ছায়া দেখা গেলো, যা মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।
সুমন আতঙ্কিত হলেও বুঝতে পারছিল, এই রহস্যের গভীরে যেতে হবে। পরদিন সকালে, ফরিদ আহমেদ আর রফিক হাসান তদন্ত শুরু করলেন এবং জানতে পারলেন, যে ব্যক্তি খুন হয়েছে, সে কয়েকদিন আগেই এক ভৌতিক কাহিনি বলেছিল স্থানীয়দের। তার ধারণা ছিল, এই জায়গায় সত্যিই কোনো অতৃপ্ত আত্মা আছে।
তদন্ত চলতে থাকলো, আর ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো এক চাঞ্চল্যকর সত্য। হত্যা কোনো অতৃপ্ত আত্মার কাজ নয়, বরং এটি এক পরিকল্পিত খুন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই নাটক সাজিয়েছিল।
রফিক হাসান ধীরে ধীরে সমস্ত প্রমাণ একত্র করলেন এবং অবশেষে খুনির পরিচয় বের করলেন। পুলিশের হাতে অপরাধী ধরা পড়লো, কিন্তু শেষ রাতে যখন সবাই নিশ্চিন্ত, তখন আবার সেই ছায়া দেখা গেলো।
কেউ কি তবে সত্যিই এখানে রয়েছে? নাকি অতৃপ্ত আত্মারা তাদের গল্প বলতে চায়?